গল্প/কাহিনি: "টিউশনি" (পর্ব-২)
মিথিলা বাসায় এসে পরেরদিন এর ক্লাস ম্যাটেরিয়ালস তৈরী করছিলো ল্যাপটপ এ। পাশে মিথিলার হাজবেন্ড রফিক শুয়ে ছিলো। এক মনে ফেসবুকিং করছে।
হঠাৎ মিথিলা কে জিজ্ঞেস করে, "তোমার স্টুডেন্ট কেমন পড়াশোনায়? তোমার মতো দুষ্ট না তো?"
মিথিলা ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়েই জবাব দেয়, "আমার স্টুডেন্ট আমার মতোই ট্যালেন্টেড আর খুব লক্ষ্মী একটা বাচ্চা।"
রফিক: ওদের ফ্যামিলি কেমন? আই মিন, বাসার পরিবেশ? আনকম্ফোর্টেবল কিছু নেই তো?
মিথিলা: না-----হ! খুব ই ছিমছাম আর গোছানো। মিসেস রায় বাচ্চা সামলে এত কিছু করার সময় কই পান কে জানে।
রফিক: সবসময়ই তো মিসেস রায়, মিসেস রায় করো। মিস্টার রায় কে কখনো দেখোনি?
মিথিলা: উহুম, না! সৈকতের বাবা কে সৈকতের ভর্তির দিন ই স্কুলে দেখেছিলাম এক নজর। এরপর আর দেখিনি৷ শুনেছি, অনেক বড় কোম্পানির সি.ই.ও। এজন্য বোধ হয় ব্যস্ত মানুষ। আবার পাশাপাশি বেইলি রোডে উনাদের নিজস্ব মালিকানাধীন মেয়েদের ড্রেসের একটা শো-রুম ও আছে। মিসেস রায় নাকি সেটা দেখাশোনা করেন। অনেক বড়লোক।
রফিক: ও, আচ্ছা। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ভালোই।
কিছুদিন পর শুক্রবার আসে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মিথিলা আর রফিক ঘুরতে বেরোয়৷ বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টে ওরা লাঞ্চ করে। তারপর শপিং এ যায়। কোনো এক দোকানে, সিল্কের একটা থ্রিপিস মিথিলার খুব পছন্দ হয়। কিন্তু, প্রাইস-ট্যাগে সেই থ্রিপিস এর দাম লিখা প্রায় ৫ হাজার টাকা। ঢাকা শহরে বর্তমান বাজারে রফিক-মিথিলার মতো মধ্যবিত্ত উঠতি সংসারে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সারা মাসের বাজার খরচ মেটানো যায়।
মিথিলা থ্রিপিস টা শুধু একবার ছুঁয়ে দেখলো। এরপর দাম দেখে সেটার দিকে আর ফিরেও তাকালো না। রফিক জিজ্ঞেস করলো, "কি? পছন্দ হয়েছে?"
মিথিলা বললো, "চলো অন্য দোকানে যাই৷ আরেকটু ঘুরে দেখি " নীরবেই চলে গেলো অন্য দোকানে।
সপ্তাহ খানেক পর মিথিলার বাসায় একটা পার্সেল আসে। মিথিলা স্কুলে ছিলো। বাসায় ছিলো রফিক। দরজায় ডেলিভারি ম্যান রফিক কে বললো, "এটা কি মিথিলা আকতার ম্যাম এর বাসা? একটা পার্সেল আছে উনার নামে।"
রফিক বললো, "জি, আমি মিথিলার হাজবেন্ড। দিন আমাকে। আমি দিয়ে দেবো।"
বিকেলে মিথিলা বাসায় ফিরলে রফিক মিথিলা কে জিজ্ঞেস করে,
"তুমি কি কোনো ড্রেস অর্ডার করেছিলে? তোমার পার্সেল এসেছে।"
মিথিলা: "আমি ড্রেস অর্ডার করবো? কই, নাতো! কিসের ড্রেস, দেখিতো!"
রফিক: "তাহলে ভুল এড্রেসে আসলো নাকি? ওই যে ওয়ারড্রব এর উপর রাখা আছে।"
মিথিলা দৌড়ে গিয়ে ড্রেস টা দেখে হাতে নিয়ে বেডের উপর ধপাস করে বসে পড়লো। এটা সেই ৫ হাজার টাকার দামের ড্রেস যেটা মিথিলা বেইলি রোডের সেই দোকানে পছন্দ করেছিলো।
আর কিছু ভাবতে যাবে, এই মুহুর্তেই মিথিলার মোবাইলের ফেসবুক মেসেঞ্জারে টুউউং শব্দ করে মেসেজ আসলো।
মিসেস রায় লিখেছেন, "ম্যাডাম, সারপ্রাইজ দিলাম আপনাকে। ড্রেস টা আপনাকে খুব সুন্দর মানাবে। প্লিজ, মানা করবেন না। বোন ভেবেই দিলাম।"
মিথিলার ভালোও লাগছে আবার অদ্ভুত ও লাগছে। ভাবতে লাগলো,
"আমি তো কয়েক সেকেন্ড ড্রেস টা হাতে নিয়ে দেখছিলাম মাত্র। আর সেই সাথে তো আরো কয়েকটা ড্রেস দেখেছি, চয়েস করেছি, ট্রায়াল দিয়েছি। কিন্তু মিসেস রায় এই ড্রেসটাই কেন আমাকে গিফট করলেন? কিভাবে জানলেন যে, এই ড্রেসটাই আমার খুব ভালো লেগেছিল?"
রফিক পাশের রুম থেকে এসে বেডরুমে এসে বসে মিথিলার পাশে। জিজ্ঞেস করে, "কি গো? ভ্যাবলার মতো বসে আছো কেন? কে দিলো খুঁজে বের করতে পারলে?"
মিথিলা সত্যিই ভ্যাবলার মতো রফিকের মুখের দিকে তাকিয়ে মিসেস রায়ের মেসেজটা দেখিয়ে বললো, "মিসেস রায় আমাকে গিফট করেছেন।"
রফিক হাসতে হাসতে বললো, "যাক, বাবা! ঈদের শপিং এর আগেই ঈদের গিফট পেয়ে গেলে! ভালোই তো কপাল তোমার।"
কিন্তু, মিথিলার মনের ঘোর কাটছেনা। কি করবে, ভেবে পায় না।
মিথিলা কি ওভারথিংকিং করছে?
নাকি সত্যিই মিসেস রায় এর মাইন্ড রিডিং এর অদ্ভুত ক্ষমতা আছে?
নাকি ব্যাপারগুলো কাকতালীয়ভাবে ঘটছে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন